সরস্বতী শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থে
'সরস্+বতু' স্ত্রী লিঙ্গে 'ঈ' প্রত্যয় যুক্ত যোগে 'সরস্বতী'। 'সতত রসে
সমৃদ্ধা'। তিনি শুক্লবর্ণা, শুভ্র হংসবাহনা, 'বীণা-রঞ্জিত পুস্তক হস্তে'
অর্থাৎ এক হাতে বীণা ও অন্য হাতে পুস্তক।
সেগুলোর গূঢ় রহস্য তথা যথার্থ তাৎপর্য হৃদয়ে ধারণ করে মাকে পূজার্চনা করা উচিত। নয়তো পূজার আড়ম্বরতা যতই হোক না কেন তা অর্থহীন। শিক্ষার্থীরা দেবী সরস্বতীর পূজা বেশি করে। কেন? কারণ তিনি জ্ঞানদায়িনী বিদ্যার দেবী সরস্বতী। বিদ্যা দান করেন তিনি। মানুষ জ্ঞান পিপাসু। সর্বদা জ্ঞানের সন্ধান করে। 'শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানং তৎপরঃ সংযতেন্দ্রিয়'(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৪/৩৯) অর্থাৎ শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি জ্ঞান লাভ করে থাকেন।
শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয় কীভাবে? শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তোলার জন্য পারিবারিক শিক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বাল্যকাল থেকেই ধর্মীয় আচার-আচরণের শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। সনাতন ধর্মাবলম্বী ছোটদেরকে ধর্মীয় চেতনা দান করার জন্য শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা অন্যতম একটি উৎসব।
পূজার আগের দিন সংযম পালন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গভীর শিক্ষা দেয়। ছোটবেলায় শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজায় সংযমের দিন মাছ-মাংস পরিহার, নিরামিষ আহার, আতপ চালের ভাত খাওয়া, উপোস থাকা সম্ভব হবে কি-না এসব নিয়ে এবং পূজার দিন উপবাস থাকা, পুষ্পাঞ্জলি অর্পণে হয় আনন্দঘন এক আয়োজন! আর এ সময়ই একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী তথা কোমলমতি শিক্ষার্থীও ধর্মীয় চেতনা পেয়ে থাকে। লক্ষণীয়, আমরা (বড়রা) প্রতিমায় ভক্তি নিবেদনের ক্ষেত্রে ওই প্রতিমার প্রণাম-মন্ত্রটুকুও জানি না! প্রণাম নিবেদনেও যে কত আধুনিকতা যুক্ত হয়েছে, তা ভাবলে অবাক হতে হয়!
শিক্ষার্থীসহ পূজিত সবাই যেন তার তাৎপর্য ও পূজার মূল আচরণে পূজিত হন সে কথা বিচার্য রেখে তার বর্ণনায় লক্ষ্য করা যাক:
দেবী শুক্লবর্ণা:
শুক্লবর্ণ মানে সাদা রং। সত্ত্বগুণের প্রতীকও হলো সাদা। পবিত্র গীতার চতুর্দশ অধ্যায়ের ৬নং শ্লোকে আছে 'তত্র সত্ত্বং নির্মলত্বাৎ' অর্থাৎ সত্ত্ব, রজঃ ও তমোগুণের মধ্যে সত্ত্বগুণ অতি পবিত্র গুণ, স্বচ্ছতার প্রতীক, নির্মলতার প্রতীক। আবার ওই অধ্যায়েরই ১৭নং শ্লোকে আছে, 'সত্ত্বাৎ সংজায়তে জ্ঞানং' অর্থাৎ সত্ত্বগুণে জ্ঞান লাভ হয়। তাই জ্ঞানময়ী সর্বশুক্লা দেবী শ্রীশ্রী সরস্বতী জ্ঞানে গুণান্বিত বলে তার গায়ের রং শুক্লবর্ণা অর্থাৎ দোষহীনা ও পবিত্রতার মূর্তি। আর জ্ঞানদান করেন বলে তিনি জ্ঞানদায়িনী। 'নহি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্রমিহ বিদ্যতে'(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৪/৩৯) অর্থাৎ 'জ্ঞানের মতো পবিত্র আর কিছু নেই'। আমরাও যেন সে গুণের অধিকারী হতে পারি এ আমাদের প্রার্থনা।
হংসঃ
জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর বাহন শ্বেতহংস। হাঁস অসারকে ফেলে সার গ্রহণ করে। দুধ ও জল মিশ্রণ করে দিলে হাঁস জল ফেলে শুধু দুধটুকু গ্রহণ করে নেয়। কিংবা কাঁদায় মিশ্রিত স্থান থেকেও তার খাদ্য খুঁজে নিতে পারে। মায়ের সঙ্গে পূজিত হয়ে শিক্ষা দিচ্ছে- সবাই যেন সবার অসার বা ভেজাল/অকল্যাণকর পরিহার করে সার বা ভালো কিছু অর্থাৎ নিত্য পরমাত্মাকে গ্রহণ করেন এবং পারমার্থিক জ্ঞান অর্জন করে সুন্দর পথে চলতে পারি।
বীণাঃ '
জীবন ছন্দময়'। বীণার ঝংকারে উঠে আসে ধ্বনি বা নাদ। বিদ্যাদেবী সরস্বতীর ভক্তরা সাধনার দ্বারা সিদ্ধি লাভ করলে বীণার ধ্বনি শুনতে পান। বীণার সুর মধুর। পূজার্থী বা বিদ্যার্থীর মুখ নিঃসৃত বাক্যও যেন মধুর হয় এবং জীবনও মধুর সংগীতময় হয় এ কারণেই মায়ের হাতে বীণা। হাতে বীণা ধারণ করেছেন বলেই তার অপর নাম বীণাপাণি।
পুস্তকঃ
বিদ্যার্থীর লক্ষ্য জ্ঞান অন্বেষণ। আর সে জ্ঞান ও বিদ্যা অন্বেষণের জন্য জ্ঞানের ভাণ্ডার 'বেদ' তার হাতে রয়েছে। 'বেদই বিদ্যা'। তিনি আমাদের আশীর্বাদ করছেন- 'জীবনকে শুভ্র ও পবিত্র রাখ। সত্যকে আঁকড়ে রাখ। মূল গ্রন্থের বাণী পালন কর। জীবন ছন্দময় কর। স্বচ্ছন্দে থাক।'
উল্লেখ্য, প্রতিটি দেব-দেবীর প্রণাম-মন্ত্র ও পুষ্পাঞ্জলি প্রদান মন্ত্র আমাদের সবার জানা উচিত। আর তাই নিম্নোক্ত মন্ত্রগুলি বিদ্যার্থীদের অবশ্যই জানা উচিত।
সরস্বতী দেবীর প্রণাম ও পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রঃ
ওঁ সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাং দেহী নমোহস্তুতে।।
ওঁ ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈই নমো নমঃ।
বেদ বেদান্ত বেদাঙ্গ বিদ্যাস্থানভ্যঃ এব চ
এষ সচন্দন পুষ্প বিল্বপত্রাঞ্জলি ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ।।
জ্ঞানদায়িনী সরস্বতী মায়ের পূজাতে ফাঁকি না দিয়ে আমরা সবাই সঠিকভাবে তার পূজা করি। তার পূজার শিক্ষায় আমরা সর্বদা সবাই শুদ্ধ জ্ঞানচর্চায় যেন রত থাকি এবং প্রার্থনা করি-
ওঁ অসতো মা সদ্গময়
তমসো মা জ্যোতির্গময়
মৃত্যুর্মা অমৃতংগময়
আবিরাবির্ম এধি।
অর্থাৎ- হে ঈশ্বর, আমাকে অসৎ থেকে সৎ লোকে, অন্ধকার থেকে আলোতে এবং মৃত্যু থেকে অমৃতে নিয়ে যাও।
সেগুলোর গূঢ় রহস্য তথা যথার্থ তাৎপর্য হৃদয়ে ধারণ করে মাকে পূজার্চনা করা উচিত। নয়তো পূজার আড়ম্বরতা যতই হোক না কেন তা অর্থহীন। শিক্ষার্থীরা দেবী সরস্বতীর পূজা বেশি করে। কেন? কারণ তিনি জ্ঞানদায়িনী বিদ্যার দেবী সরস্বতী। বিদ্যা দান করেন তিনি। মানুষ জ্ঞান পিপাসু। সর্বদা জ্ঞানের সন্ধান করে। 'শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানং তৎপরঃ সংযতেন্দ্রিয়'(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৪/৩৯) অর্থাৎ শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি জ্ঞান লাভ করে থাকেন।
শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয় কীভাবে? শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তোলার জন্য পারিবারিক শিক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বাল্যকাল থেকেই ধর্মীয় আচার-আচরণের শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। সনাতন ধর্মাবলম্বী ছোটদেরকে ধর্মীয় চেতনা দান করার জন্য শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা অন্যতম একটি উৎসব।
পূজার আগের দিন সংযম পালন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গভীর শিক্ষা দেয়। ছোটবেলায় শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজায় সংযমের দিন মাছ-মাংস পরিহার, নিরামিষ আহার, আতপ চালের ভাত খাওয়া, উপোস থাকা সম্ভব হবে কি-না এসব নিয়ে এবং পূজার দিন উপবাস থাকা, পুষ্পাঞ্জলি অর্পণে হয় আনন্দঘন এক আয়োজন! আর এ সময়ই একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী তথা কোমলমতি শিক্ষার্থীও ধর্মীয় চেতনা পেয়ে থাকে। লক্ষণীয়, আমরা (বড়রা) প্রতিমায় ভক্তি নিবেদনের ক্ষেত্রে ওই প্রতিমার প্রণাম-মন্ত্রটুকুও জানি না! প্রণাম নিবেদনেও যে কত আধুনিকতা যুক্ত হয়েছে, তা ভাবলে অবাক হতে হয়!
শিক্ষার্থীসহ পূজিত সবাই যেন তার তাৎপর্য ও পূজার মূল আচরণে পূজিত হন সে কথা বিচার্য রেখে তার বর্ণনায় লক্ষ্য করা যাক:
দেবী শুক্লবর্ণা:
শুক্লবর্ণ মানে সাদা রং। সত্ত্বগুণের প্রতীকও হলো সাদা। পবিত্র গীতার চতুর্দশ অধ্যায়ের ৬নং শ্লোকে আছে 'তত্র সত্ত্বং নির্মলত্বাৎ' অর্থাৎ সত্ত্ব, রজঃ ও তমোগুণের মধ্যে সত্ত্বগুণ অতি পবিত্র গুণ, স্বচ্ছতার প্রতীক, নির্মলতার প্রতীক। আবার ওই অধ্যায়েরই ১৭নং শ্লোকে আছে, 'সত্ত্বাৎ সংজায়তে জ্ঞানং' অর্থাৎ সত্ত্বগুণে জ্ঞান লাভ হয়। তাই জ্ঞানময়ী সর্বশুক্লা দেবী শ্রীশ্রী সরস্বতী জ্ঞানে গুণান্বিত বলে তার গায়ের রং শুক্লবর্ণা অর্থাৎ দোষহীনা ও পবিত্রতার মূর্তি। আর জ্ঞানদান করেন বলে তিনি জ্ঞানদায়িনী। 'নহি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্রমিহ বিদ্যতে'(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৪/৩৯) অর্থাৎ 'জ্ঞানের মতো পবিত্র আর কিছু নেই'। আমরাও যেন সে গুণের অধিকারী হতে পারি এ আমাদের প্রার্থনা।
হংসঃ
জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর বাহন শ্বেতহংস। হাঁস অসারকে ফেলে সার গ্রহণ করে। দুধ ও জল মিশ্রণ করে দিলে হাঁস জল ফেলে শুধু দুধটুকু গ্রহণ করে নেয়। কিংবা কাঁদায় মিশ্রিত স্থান থেকেও তার খাদ্য খুঁজে নিতে পারে। মায়ের সঙ্গে পূজিত হয়ে শিক্ষা দিচ্ছে- সবাই যেন সবার অসার বা ভেজাল/অকল্যাণকর পরিহার করে সার বা ভালো কিছু অর্থাৎ নিত্য পরমাত্মাকে গ্রহণ করেন এবং পারমার্থিক জ্ঞান অর্জন করে সুন্দর পথে চলতে পারি।
বীণাঃ '
জীবন ছন্দময়'। বীণার ঝংকারে উঠে আসে ধ্বনি বা নাদ। বিদ্যাদেবী সরস্বতীর ভক্তরা সাধনার দ্বারা সিদ্ধি লাভ করলে বীণার ধ্বনি শুনতে পান। বীণার সুর মধুর। পূজার্থী বা বিদ্যার্থীর মুখ নিঃসৃত বাক্যও যেন মধুর হয় এবং জীবনও মধুর সংগীতময় হয় এ কারণেই মায়ের হাতে বীণা। হাতে বীণা ধারণ করেছেন বলেই তার অপর নাম বীণাপাণি।
পুস্তকঃ
বিদ্যার্থীর লক্ষ্য জ্ঞান অন্বেষণ। আর সে জ্ঞান ও বিদ্যা অন্বেষণের জন্য জ্ঞানের ভাণ্ডার 'বেদ' তার হাতে রয়েছে। 'বেদই বিদ্যা'। তিনি আমাদের আশীর্বাদ করছেন- 'জীবনকে শুভ্র ও পবিত্র রাখ। সত্যকে আঁকড়ে রাখ। মূল গ্রন্থের বাণী পালন কর। জীবন ছন্দময় কর। স্বচ্ছন্দে থাক।'
উল্লেখ্য, প্রতিটি দেব-দেবীর প্রণাম-মন্ত্র ও পুষ্পাঞ্জলি প্রদান মন্ত্র আমাদের সবার জানা উচিত। আর তাই নিম্নোক্ত মন্ত্রগুলি বিদ্যার্থীদের অবশ্যই জানা উচিত।
সরস্বতী দেবীর প্রণাম ও পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রঃ
ওঁ সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাং দেহী নমোহস্তুতে।।
ওঁ ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈই নমো নমঃ।
বেদ বেদান্ত বেদাঙ্গ বিদ্যাস্থানভ্যঃ এব চ
এষ সচন্দন পুষ্প বিল্বপত্রাঞ্জলি ওঁ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ।।
জ্ঞানদায়িনী সরস্বতী মায়ের পূজাতে ফাঁকি না দিয়ে আমরা সবাই সঠিকভাবে তার পূজা করি। তার পূজার শিক্ষায় আমরা সর্বদা সবাই শুদ্ধ জ্ঞানচর্চায় যেন রত থাকি এবং প্রার্থনা করি-
ওঁ অসতো মা সদ্গময়
তমসো মা জ্যোতির্গময়
মৃত্যুর্মা অমৃতংগময়
আবিরাবির্ম এধি।
অর্থাৎ- হে ঈশ্বর, আমাকে অসৎ থেকে সৎ লোকে, অন্ধকার থেকে আলোতে এবং মৃত্যু থেকে অমৃতে নিয়ে যাও।
হিন্দু দেব দেবী সম্পর্কে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন ।
0 Comments